লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ও হাদিস

 প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আসসালামু আলাইকুম। আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ও হাদিস নিয়ে। শবে কদর বা লাইলাতুল কদর পালন জায়েজ নাকি নাজায়েজ, শবে কদর নিয়ে কোরআন মাজীদের আয়াত ও শবে কদর নিয়ে হাদিস শরীফের ভিত্তিতে আলোচনা করা হবে। 

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর সম্পর্কে আলোচনা

প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা অনেকে  লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ও হাদিস সম্পর্কে জানতে চান, আবার অনেকে জানতে চান লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে। শুধু তাই নয়, আমরা এখানে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর সম্পর্কে আলোচনা করব। এছাড়া লাইলাতুল কদর বা শবে কদর সম্পর্কে হাদিস বর্ণনা করব এবং লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের দোয়া বাংলায় দেয়া হবে যেন আপনারা সহজে পড়তে পারেন। আপনাদের অবগতির জন্য আরো আলোচনা করা হবে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের সুরা আরবী, লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের সুরা বাংলা অর্থ ইত্যাদি।

এই পোস্টে যে সকল টপিক আলোচনা করা হবে সেগুলো হলো: 

আর্টিকেল সূটিপত্রঃ  লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ও হাদিস

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর সম্পর্কে আলোচনা

হিজরী সালের নবম মাস হলো রমজান। রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের আহবান নিয়ে প্রতিবছর রমজান আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়। অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যাধিক। কেননা এই মাস কোরআন নাজিলের মাস, এ মাস লাইলাতুল কদরের মাস রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের পবিত্র এই মাস। এই মাসকে আল্লাহ তায়ালা বিস্ময়কর এবং অসাধারণ বৈশিষ্ট্যে সমুন্নত করেছেন।

বিশেষ করে এ মাসে এমন একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ রাত রয়েছে যে রাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা বলা-বাহুল্য সে রাতটি হল পবিত্র লাইলাতুল কদর। মুসলিম মিল্লাতের জন্য দয়ময় আল্লাহ ও তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে সারা বছরের মধ্যে যে কয়েকটি ফজিলত পণ্য রজনী রয়েছে তারমধ্যে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী অন্যতম। আর শবে-কদর শব্দের অর্থ হল সম্মানিত বা মহিমান্বিত রজনী, কদরের নির্ধারণ বা পরিমাণ। পরিভাষায় বলা যায় যেহেতু এ রাতে মহান আল্লাহ পাক মানবমন্ডলী ও সৃষ্টিকুলের পূর্ণ এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণপূর্বক প্রত্যেক প্রাণীর রিজিকসহ সর্ব প্রকার কার্যক্রম নির্ধারণ করার জন্য ফেরেশতাদের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করে থাকেন বিধায় এ রাতকে লাইলাতুল কদর বা পরিমাপ নির্ধারনী রাত বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ ২৭ রমজানের দোয়া

সম্মানিত পাঠক, এ রাতের তাৎপর্য ও মর্যাদা হাসিল করতে হলে মুমিন হওয়া প্রথম শর্ত, মমিন না হওয়া পর্যন্ত এ রাতের মর্যাদা কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না প্রানাধিক নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি আসসালামের প্রতি শতভাগ ভালোবাসা ও ঈমান এবং সেই দিশায় নিজের জীবন গঠনের মধ্যে শবে-কদরের আলো হাসিল হবে। কেননা কদরের মূল হলেন আল্লাহর রাসূল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত 

আসুন, এই রাতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে সূরা-কদর নাজিল করেছেন। পবিত্র কালাম এরশাদ হচ্ছে…

انا انزلناه في ليله القدر. - وما ادراك ما ليله

القدر - ليله القدر خير من الف شهر - تنزلوا الملائكه والروح فيها باذن ربهم من كل امر - سلام هي حتى طلع الفجر "

অর্থাৎ: নিশ্চয় আমি (আল্লাহ) কুরআন অবতীর্ণ করেছি পবিত্র লাইলাতুল কদর রাত্রিতে। পবিত্র কদরের মর্যাদা সম্পর্কে আপনি কি জানেন? কদরের রাত্রিটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহর নির্দেশক্রমে বান্দার প্রত্যেক কাজের জন্য বিশেষত জিবরাঈল আঃ আগমন করে থাকেন। এ শান্তি বা নিরাপত্তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অর্থাৎ লাইলাতুল কদর ওই রজনী ইবাদত করলে হাজার মাস তথা ৮৪বছর চার মাসের চেয়েও বেশি বরকত পাওয়া যাবে।

লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ও হাদিস

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর সম্পর্কে হাদিস

সম্মানিত পাঠক কদরের মর্যাদা বর্ণনা করে অসংখ্য হাদিস শরীফ বর্ণিত হয়েছে মধ্য থেকে কয়েকটি হাদিস শরীফ উপস্থাপন করা হলো- সহিহ বুখারী শরীফ: ৩/২৬পৃষ্ঠা। ১৯০১ নং হাদিসে বর্নিত-

عن ابي هريره رضي الله تعالى عن عن النبي صلى الله عليه وسلم قال من قام ليله قدري ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه رمضان واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه

অর্থাৎ- হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ননা করেন প্রানাধিক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় ডান্ডায়মান অর্থাৎ রাতে নামাজ পড়ে এবং দিনে রোজা রাখে তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। শবে-কদর এমন একটি মহান রাত যে! অন্য কোন রাত এ রাতের মর্যাদায় পৌঁছাতে পারেনা।

হাদিস শরীফে আরো বর্ণনা আছে, সুনানে ইবনে মাজা শরীফ প্রথম খন্ড 526 পৃষ্ঠায়।

عن انس بن مالك قال رسول الله صلى الله عليه ان هذا الشهر قدر حضركم ، وفيه ليله خير من الف من حرمها فقد حرم الخير كله،ولا يحرم خيرها الا محروم -

অর্থাৎ: হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রমজান সন্নিকটে আসলে প্রানাধিক প্রিয়নবী বলতেন, নিশ্চয়ই রমজান মাস উপস্থিত হয়েছে এতে এমন বরকতমন্ডিত রাত নিহিত রয়েছে যা হাজার মাসের অপেক্ষায় উত্তম। যে একে সম্মান করবে সে যেন পুরো নিজের কল্যানকে সম্মান করলো আর যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে যেন নিজের কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো।

লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাত নিহিত.. এইজন্য প্রিয়নবী বলেন তোমরা রমজানের শেষের ১০ দিনের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর যেমন হাদীস শরীফে বর্ণনা হয়েছে, সহীহ বুখারী তৃতীয় খন্ড ৪৬পৃষ্ঠা, ২০১৭নং হাদিসে রয়েছে-

عن عائشه رضي الله تعالى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال تحروا ليله في الوتري من الشهر الاواخر من رمضان

অর্থাৎ- আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাঃ এরশাদ করেন তোমরা লাইলাতুল কদর কে রমজানের শেষ ১০রাত্রিতে তালাশ কর।

লাইলাতুল কদর রমজানের ২৭ তারিখ রাতেই নিহিত। যদিও লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ ১০ দিনের রাতে নিহিত রয়েছে তবুও ওলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনগণ বলেছেন, বিশেষ করে রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত ২৭ তারিখের কদর নিহিত রয়েছে। তারা এর প্রমাণস্বরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কয়েকটি হাদিস শরীফ পেশ করেন যেমন প্রিয়নবী বলেন শরহে মায়ানিল আসা'র তৃতীয় খন্ড, ৯২ পৃষ্ঠা-

عن ابي بن كعب رضي الله تعالى: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ليله القدر ليله السبع وعشرين

অর্থাৎ হযরত ওবা ইবনে কাব রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর হলো ২৭ তারিখ রাত।

এভাবে অন্যান্য হাদীস শরীফ বর্ণনা হয়েছে তোমরা লাইলাতুল কদর তালাশ কর রমজানের ২৭ তারিখে। সহি মুসলিম দ্বিতীয় খন্ড ৮২৩ পৃষ্টা বর্ননা আছে-

عن سالم عن ابيه رضي الله تعالى عنه قال رجل ليله القدر صبعي وشين,

হযরত জাবের ইবনে সামুরা সামুর তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন নিশ্চয় লাইলাতুলকদর হল রমজানের ২৭ তারিখ রাত।

পবিত্র লাইলাতুল কদর এর মর্যাদা বর্ণনা সম্পর্কে তাফসীরে রুহুল বয়ানের বর্ণিত আছে- পবিত্র রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাধ্যমে আর ১২রবিউল আউয়াল দামি হলো প্রিয়নবীর শুভ আগমন তথা ঈদে আজমের মাধ্যমে এক কথা বলা যায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাওয়া-ই শবে কদর পাওয়া। প্রিয়নবীকে পাওয়াই স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কে পাওয়া, বরকত পাওয়া, নাজাত পাওয়া, রহমত পাওয়া। আর যে প্রিয়নবীকে পেলনা সে মূলত কদর থেকেই বঞ্চিত হলো। প্রিয়নবীর মধ্যেই স্বয়ং দয়াময় আল্লাহ তাআলা কেননা সবকিছুর মূলে রয়েছে ঈমান আর ঈমানের মূল হলেন প্রানাদিক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সূরা মায়েদার 32 নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন- وما ارسلناك الا رحمه اللعالمي অর্থাৎ- হে হাবিব আমি আপনাকে সৃষ্টি করেছি সমগ্র কুল কায়নেতে রহমত স্বরূপ হিসেবে।

তবে এ রাতে ক্ষমার অযোগ্য যারা, এমন কিছু বান্দা আছে যাদের অপরাধ কদরের রাত্রিতেও ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ১.অনিষ্টকারী জাদুকর ও গণক ২. মাতা পিতার অবায়ধ্য সন্তান ৩. যার অন্তর হিংসায় বিদ্বেষ ও পরিপূর্ণ ৪. ব্যভিচারী ৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ৬.চোগলখোর ও পরনিন্দাকারী ৭. বান্দার হক আত্মসাৎকারি । তবে তওবা করলে হয়তো আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন এটি আল্লাহর ইচ্ছা অতএব মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুল কদরের সমস্ত ফজিলত বরকত মাগফিরাত আমাদের সবাইকে নসিব করুক। আমিন…

লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের সুরা আরবী: 

ইন্না আনজালনাহুফি লাইলাতিল কাদরি, ওয়ামা আদরাকামা লাইলাতুল কাদর। লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আল ফিহশাহর।

লাইলাতুল-কদর-বা-শবে-কদরের-সুরা-আরবী


তানাযযালুল মালায়িকাতু ওয়াররুহু ফিহা বিইজনি রাব্বিহিম মিনকুললি আমরিন। সালামুন হিয়া হাত্তামাত লায়িল ফাজরি।

লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের সুরা বাংলা অর্থ: 

নিশ্চয়ই আমি এই কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহামহিম রাতে। এই রাত তথা লাইলাতুল কদর রাত সম্পর্কে আপনি তো জানেন?

লাইলাতুল-কদর-বা-শবে-কদরের-দোয়া-বাংলা

এই রাত তথা কদরের রাত হলো হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতে তাদের পালনকর্তার নির্দেশে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেসতা ও রুহ অবতীর্ণ হয়।

লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের দোয়া বাংলা: 

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা উফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফাআফু আননি। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি দয়াময় ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন

আমাকে ক্ষমা করে দিন। (সুত্র: মেশকাত শরীফ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)। যেহেতু এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাহদের ক্ষমা করেন, তাই আমাদের সকল মুসলিম ভাইবোনদের উচিত এই মহান শবে কদরের রাতে দয়াময় আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ফজর পর্যন্ত এই রাত শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকে।

শেষ কথাঃ লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ও হাদিসঃ

প্রিয় পাঠকবৃন্ধ, আশা করি সবাই অনেক ধৈর্য সহকারে আজকের  লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ও হাদিস আর্টিকেলটি পড়েছেন। আশা করি আপনারা বুজতে পেরেছেন  লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ,  লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের হাদিস নিয়ে আলোচনা,  লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত নিয়ে কোরআন ও হাদিস থেকে আলোচনা, এবং  লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের দোয়া, মুনাজাত,  লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের দোয়া বাংলা এবং আরবী উচ্চারণ সহ দেয়া হয়েছে। সবাই আমল করে উপকৃত হবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url