কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ভূমিকা: কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা
সূচিপত্রঃ কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা
কিসমিসের উপকারিতা:
এখন আমরা জানব কিসমিসের উপকারিতা নিয়ে। ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে ক্যালরি রয়েছে ৩১৬ ক্যালোরি এবং ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে কার্বোহাইডেট রয়েছে ৭৬ গ্রাম। তাই বলা হয়ে থাকে যে সকল মানুষেরা তারা তাদের ওজন কমাতে চাচ্ছেন এবং যে সকল মানুষের ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন তারা কিসমিস এড়িয়ে চলা ভালো। কিন্তু জেনে রাখা ভালো কিসমিসের রেকমেন্ডেড কোয়ান্টিটি হল 10 to12 Raisins per day.
অর্থাৎ আপনি যদি কিসমিসকে health supplements হিসেবে নিতে চান তাহলে আপনার জন্য 10 থেকে 12 টি কিসমিস যথেষ্ট। তাহলে আপনারা অনুমান করতে পারেন ১০ থেকে ১২ টা কিসমিস এ কতটা পরিমাণ ক্যালরি বা কার্বোহাইডেট থাকতে পারে। তাই এটি স্বাস্থ্যকে অনেক গুন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
১. শক্তি বাড়াতে: কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি। যাদের ওজন কম তাদের জন্য কিসমিস পুষ্টির একটি ভালো উৎস হতে পারে । এতে যে শর্করা রয়েছে তা শরীরের জন্য উত্তম । এতে শারীরিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না । যারা কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন তাদের জন্য নিয়মিত কিসমিস খাওয়া উপকারী। এটি ধীরে ধীরে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
২. চুলের যত্নে কিসমিস: কিসমিসের রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, ও রাসায়নিক পদার্থ। ভিটামিন বি আয়রন, পটাশিয়াম, জিংক যা চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের জন্য উপকারী। নিয়মিত কিসমিস খাওয়া চুলের খুশকির পরিমাণ কম করে। নতুন চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৩. ত্বকের যত্নে কিসমিস: কিসমিস ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। কিসমিসের ভিটামিন এ এবং ই ত্বকের নতুন কোষ তৈরি করে। ফলে ত্বক সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে থাকে। কিসমিস ত্বকের জন্য অনেক উপকার করে। কিসমিসে থাকা এন্টি অক্সিজেন ফ্রিরেডিকেলের সাথে মোকাবিলা করে ত্বক কুঁচকে যাওয়া ,বলি রেখা বয়সের চাপের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
৪. যৌন জীবনের উন্নতিতে কিসমিস: কিসমিসে থাকা আর্জেনিন নামক এমাইনো এসিড স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর পরিমাণে উপকারী। এই এমাইনো এসিড স্বাভাবিক যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং যৌন জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক প্রয়োজনীয়। এটি হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে।
৫. হজমে উন্নতি: কিসমিস হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে দেয়। প্রতিদিন কিসমিস খাওয়া মানব দেহের জন্য অনেক উপকারী। বদহজমজনিত সমস্যা কে দূর করে কিসমিস। এর সাথে শরীর থেকেও প্রয়োজনীয় টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। একই সাথে ডিটোক্স হিসেবে কাজ করে।
৬. ওজন বৃদ্ধিতে কিসমিস: যারা ওজন নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন নিয়ম করে খালি পেটে কিসমিস খেতে পারেন। এতে ধীরে ধীরে শরীরে ওজন বৃদ্ধি পাবে।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর: যারা প্রতিদিন পেটের সমস্যায় ভোগে তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো পানি খেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ওষুধের বদলে নিয়মিত কিসমিস খেতে পারেন।
কিসমিসের অপকারিতা:
এতক্ষণ কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এবার আমরা কিসমিসের অপকারিতা সম্পর্কে জানব। প্রতিটি জিনিসে ভালো খারাপ দুটি দিক রয়েছে।তেমনি কিসমিসের ও অপকারিতা রয়েছে।
১. শরীর কমানোর ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে কিসমিস খাবেন না কারণ কিসমিসে শরীরের ওজন বাড়ে।
২. যাদের ডায়াবেটিস তারাও অতিরিক্ত কিসমিস খাবে না ডায়াবেটিস বেড় যেতে পারে।
৩. কিসমিস এলার্জির সমস্যাও বাড়াতে পারে তাই এলার্জি থাকলে বেশি কিসমিস খাবেন না।
৪. কিসমিস অধিক সেবনে বমি, ডায়েরিয়া ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হয়।
৫. অধিক পরিমাণে কিসমিস খেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম:
১.কিসমিস শুকনা কিংবা ভিজে যেভাবে খান না কেন ১০০ গ্রামের বেশি কিসমিস খাওয়া যাবেনা।
২. কিসমিস প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে পাঁচ দিন খেলে ভালো হয়। তবে সাত দিন খেলেও কোন সমস্যা নেই।
৩. বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধ জাতীয় বা পুডিং বানাতে কিসমিস ব্যবহার করতে পারেন।
৪. প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ছয় থেকে সাতটা ভিজিয়ে রাখুন। ঘুম থেকে সকালে উঠে খালি পেটে খাওয়া।
৫. সালাদ খাওয়ার সাথে ও যোগ করতে পারেন।
৬. দুধের তৈরি সেমাই,চাটনি, ফালুদা, ইত্যাদি বানানোর সময় কিসমিস যোগ করতে পারেন।
৭. সকালের নাস্তায় দুধ কলার সাথে ও কিসমিস খেতে পারেন।
৮. বিভিন্ন ধরনের মিক্স খাবারেও কিসমিস ব্যবহার করতে পারেন।
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়:
১. কিসমিস হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে।
২. শুকনো কিসমিস রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
৩. যাদের চোখে পানি পড়েছে, তাদের জন্য শুকনো কিসমিস খুবই উপকারী।
৪. শুকনো কিসমিস বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
৫. যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে তা দূর করতেও কিসমিস খেতে পারেন।
৬. লিভারের জমাকৃত কোলেস্টরে দূর করতে সাহায্য করে।
৭. কিসমিসে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেকটরি উপাদান শরীরে কোনো জীবাণু থাকলে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
কিসমিসের পুষ্টি গুনাগুন:
২০০ গ্রাম কিসমিসে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে তা জেনে নেয়া যাক।
১. খাদ্যশক্তি = ৫৯৮ কিলোক্যালরি
২. প্রোটিন = ৬.১৪ গ্রাম
৩. ফ্যাট = ০.৯৫ গ্রাম
৪. শর্করা = ১১৮.৩৮ গ্রাম
৫. ক্যালসিয়াম = ১০০ মিলিগ্রাম
৬. পটাশিয়াম = ১৪৯৮ মিলিগ্রাম
৭. ভিটামিন বি ৬ = ০.৩৪৮ মিলিগ্রাম
৮. ভিটামিন সি = ৪.৬ মিলিগ্রাম
৯. ভিটামিন ই = ০.২৪ মিলিগ্রাম
১০. ভিটামিন কে = ৬.১০ মিলিগ্রাম
১১. জিংক = ০.৪৪ মিলিগ্রাম
১২. সোডিয়াম = ২২ মিলিগ্রাম
কিসমিসের পুষ্টিগুন অনেক বেশি বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি নিয়মিত কিসমিস খান তাহলে মানব দেহের জন্য তা অনেক কার্যকরী।
কিসমিস ভেজিয়ে খাওয়ার নিয়ম:
কিসমিস অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে সমস্যা। তাই কিসমিস পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত। কিসমিস এমন একটি খাবার যা সকল রোগের চাবিকাঠি। রাতে ঘুমানোর সময় কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে সে জল সামান্য গরম করে নিন। খালি পেটে এরপর আধাঘন্টা অন্য কিছু খাবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে সপ্তাহে রোজ না দুই থেকে তিন দিন এই জল খেলে উপকার পাবেন। কিসমিস কেনার সময় কালচে রঙের কিসমিস নিতে হয়। একদম চকচকে কিসমিস না খাওয়াই উত্তম।
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়:
কিসমিসের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ থাকে। যারা গ্যাসের কারণে সারারাত ঘুম হয় না। কিসমিসের কারণে ওই সকল সমস্যা দূর হয়। যাদের ঘুম থেকে ওঠার সময় হাত পা অথবা অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ ব্যথা করে তাদের জন্য কিসমিস উপকারী। কিসমিস নিদ্রাহীনতা থেকে মুক্তি দেয়।
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে শরীরের রক্তের অভাব দূর হয় এবং শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে তা দূর হয়। এবং রাতে খেলে আপনার দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে। কিসমিস দুধের সঙ্গে খাওয়ার মাধ্যমে পুষ্টিতে ভরপুর হয়ে যাবে। শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে তা পূরণ হয়ে যাবে। শরীরের লোহিত রক্তকণিকা শর্করার মাত্রাগুলো ও নিয়ন্ত্রণ করে।
কিসমিস শরীরে রোগবালাইয়ের সাথে লড়াই করে। সারাদিনের কাজ করার মাধ্যমে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কিসমিস সাহায্য করে।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়:
সকালে অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া যাবেনা । কারণ অতিরিক্ত খাবার মাধ্যমে বদহজম ও হতে পারে। এজন্য দুই বা চারটি খাবেন কিসমিস । সকালে খালি পেটে খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে সারারাত পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখবেন । সকালে উঠে কোন কিছু না খেয়ে ব্রাশ করে কিসমিসের পানি খাবেন। তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
সকালে খালি পেটে কিসমিস আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কিসমিস খালি পেটে খাওয়া উত্তম । তাই আমাদের সবার প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়া উচিত । সকালে খালি পেটে খাবার মাধ্যমে আমাদের হৃদপিন্ডকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত:
আমরা সকলেই জানি কোন কিছু মাত্রারিক্ত হওয়া উচিত নয়। আমরা প্রতিনিয়ত কিসমিস খায় কিন্তু কতটুকু খাওয়া দরকার তার সম্পর্কে জানা নেই। বিশেষজ্ঞরা অনেক ধরনের পরীক্ষা করে মত প্রকাশ করেছেন কিসমিস সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খাওয়ার মাধ্যমে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
কিসমিসে থাকা আয়রন,পটাশিয়াম ,প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বিসিক্স এবং কপার ইত্যাদি পুষ্টি রয়েছে যা প্রতিদিন খালি পেটে খাওয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে উপকার পাওয়া যায়। সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ গ্রামের মতো কিসমিস খাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এর বেশি খাবার দরকার নেই এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই কিসমিসে থাকে:
ক্যালরি ১২০
ফাইবার ৩ গ্রাম
পটাশিয়াম ২৩৫ মিলিগ্রাম
আয়রন ১.৩ মিলিগ্রাম।
কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষ কথা:
আশা করছি এতক্ষণে ভালোভাবে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারছেন। আপনারা যদি প্রতিদিন কিসমিস খাওয়া অভ্যাস করতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন। শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য কিসমিস খেতে পারেন।
আজ আমরা কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা,কিসমিস খাওয়ার নিয়ম, শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়, কিসমিসের পুষ্টি গুনাগুন, কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম, রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়, সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম, প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত ইত্যাদি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আমাদের এই কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা উপকৃত হবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url