লিচুর উপকারিতা অপকারিতা এবং লিচু খাওয়ার নিয়ম সতর্কতা
লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকে আর্টিকেলটি যদি ধৈর্য সহকারে পড়েন তাহলে লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে খুব সহজে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার দিকসমূহ জেনে আসি।
গ্রীষ্মকালীন ফল গুলোর মধ্যে সবার পছন্দের একটি ফল হলো লিচু। লিচু খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। রসালো ফলের মধ্যে লিচু একটি ফল। লিচুর বৈজ্ঞানিক নাম Litchi Chinese। লিচু অধিক পরিমাণে উৎপাদিত হয় বাংলাদেশের রাজশাহী ও দিনাজপুরে।
লিচুতে থাকে অনেক রকম পুষ্টি। যা কিনা আপনাকে অনেক রকম অসুখ থেকে রক্ষা করবে। লিচু আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। লিচু সাধারণত অন্যান্য ফলের মত বেশি দিন থাকে না। গ্রীষ্মকালীন কিছু সময়ের জন্য আসে ।তাই ওই সময়ে যারা ওজন কমাতে চায় তারা কমাতে পারে।
পেজ সূচিপত্র: লিচুর উপকারিতা অপকারিতা এবং লিচু খাওয়ার নিয়ম সতর্কতা
- লিচুর উপকারিতা
- লিচুর পুষ্টিগুণ
- লিচুর অপকারিতা
- কাঠ লিচুর উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় লিচুর উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় বেশি লিচু খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
- লিচু খাওয়ার নিয়ম বা সতর্কতা
- খালি পেটে লিচু খাওয়া যাবে কি না
- বাচ্চাদের লিচু খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
- শেষ কথা: লিচুর উপকারিতা অপকারিতা এবং লিচু খাওয়ার নিয়ম সতর্কতা
লিচুর উপকারিতা:
1. বিশেষজ্ঞদের মতে 100 গ্রাম লিচুতে ৬১ কিলো ক্যালরি মতো শক্তি থাকে।
2. লিচু আমাদের শরীরে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে।
3. লিচুতে থাকা ক্যালরি আমাদের শরীরকে শক্তি জমাতে ভূমিকা রাখে।
4. লিচুতে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপার ফসফরাস ও ম্যাগাজিন এছাড়াও আরো অনেক উপকারী উপাদান বিদ্যমান।
5. লিচুতে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে হাড়ের ক্যালসিয়ামকে শোষণ করতে সাহায্য করে।
6. লিচু খাওয়ার মাধ্যমে লিচুর উপাদান গুলো আমাদের কিডনিতে জমে থাকা টক্সিন গুলোকে বাইরে বের করতে ভূমিকা পালন করে।
7. লিচুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
8. লিচুতে থাকা নাইট্টিক এসিড যা আমাদের শরীরের ভিতরে রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে।
9. লেচুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।
10. লিচু আমাদের ত্বকের দাগ ও বলিরেখা দূর করে।
লিচুর পুষ্টিগুণ:
1. লিচুতে রয়েছে অধিক পরিমাণে শ্বেতসার।
2. ১০০ গ্রাম লিচুতে ক্যালরি ৬১ কিলো ক্যালরি।
3. ১০০ গ্রাম লিচুতে খনিজ লবণ ০.৫ গ্রাম।
4. ১০০ গ্রাম লিচুতে ভিটামিন সি ৩১.৫ মিলিগ্রাম।
5. ১০০ গ্রাম লিচুতে লৌহ পাওয়া যায় ০.৭ গ্রাম।
6. প্রোটিন 0.৮ গ্রাম.
7. কার্বোহাইড্রেট ১৬.৫ গ্রাম।
8. ফাইবার ১.৩ গ্রাম।
9. ফ্যাট ০.৪ গ্রাম।
লিচুর অপকারিতা:
লিচু সুস্বাদু হলেও অতিরিক্ত কোন কিছুই মোটেও শরীরের জন্য ভালো না। ১০-১২ টি লিচু খাওয়া স্বাভাবিক এর বেশি খাওয়া মোটেও ভালো না।
1. অতিরিক্ত লিচু রক্তচাপ কমে যেতে পারে শ্বাসকষ্টের লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
2. যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা লিচু খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
3. বাচ্চাদের কখনো খালি পেটে লিচু খাওয়ানো উচিত না।
4. খালি পেটে লিচু খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের বিষক্রিয়া হতে পারে।
5. বেশি লিচু রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়।
6. অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার ফলে লো প্রেসারের রোগীর বুক ধরফরে সমস্যা হতে পারে।
কাঠ লিচুর উপকারিতা:
1. কাঠ লিচু এলার্জি ও ক্যান্সার নিরাময় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
2. কাঠ লিচু সুস্বাদু ফল এতে অধিক পরিমাণে শর্করা ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে।
3. কাঠ লিচু কাশি ও টিউমার কমাতে ও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
4. কাঠ লিচুতে রয়েছে লৌহ যা আমাদের শরীরের ক্ষয় পূরণ করতে সাহায্য করে।
5. কাঠ লিচু শরীরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
6. কাঠ লিচু দিয়ে বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ ও তৈরি করা হয়।
গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা:
1.লিচুতে ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ায় গর্ভাবস্থায় যা খুব উপকারী।
2.ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
3.গর্ভাবস্থায় 3-4 টা লিচু খেতে পারে।
4.লিচু নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে সর্দি ও ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
5. লিচুতে ফাইবার থাকায় হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
6. লিচু লিভারের সুরক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে।
গর্ভাবস্থায় বেশি লিচু খাওয়ার ক্ষতিকর দিক:
1. গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে লিচু খেলে এলার্জির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
2. বেশি লিচু খাওয়ার মাধ্যমে বদহজমও হতে পারে।
3. গর্ভাবস্থায় খালি পেটে লিচু না খাওয়াই ভালো।
4. লিচু খাওয়ার পর রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত গর্ভাবস্থায়।
5. বেশি পরিমাণে লিচু খাওয়ায় রক্তক্ষরণও হতে পারে।
6. বেশি লিচু খাওয়ার মাধ্যমে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
7. বেশি লিচু খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
লিচু খাওয়ার নিয়ম বা সতর্কতাঃ
1. লিচু বেশি খাওয়া যাবেনা। প্রতিদিন সাত থেকে আটটা খাওয়া যাবে না হয় ক্ষতি হতে পারে।
2. লেচু সব সময় খাবারের ৩০ মিনিট পর খাওয়া উচিত।
3. কাঁচা লিচু খাওয়া কখনোই উচিত না কারণ কাঁচা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন বেশি থাকে।
4. লিচু সকালে নাস্তা করার পর ও খেতে পারা যাবে।
5. লিচু রাতে কম খাওয়া ভালো কারণ লিচুতে টক্সিনের উপাদান রয়েছে।
খালি পেটে লিচু খাওয়া যাবে কি না:
1.খালি পেটে লিচু খাওয়া ক্ষতিকর কিন্তু ভরা পেটে খাওয়া যাবে।
2. লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি উপাদান আছে যা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
3. কাঁচা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন মারাত্মকভাবে থাকে যা শরীরের জন্য অধিক ক্ষতিকর।
4. খালি পেটে লিচু খাওয়ার মাধ্যমে জ্বরও হতে পারে।
বাচ্চাদের লিচুর ক্ষতিকর দিক:
1. খালি পেটে বাচ্চাদের লিচু খাওয়ালে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
2. খালি পেটে লিচু খাওয়ার মাধ্যমে অনেক শিশু অসুস্থ হয়েছে বলে গবেষণায় জানা গেছে।
3. খালি পেটে লিচু বাচ্চাদের খিচুনির কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
4. খালি পেটে লিচু ক্রমাগত বমির হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।
শেষ কথা লিচুর উপকারিতা অপকারিতা এবং লিচু খাওয়ার নিয়ম সতর্কতা:
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সহজ ভাবে লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবং লিচুর ক্ষতিকর দিক,লিচু খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আশা করছি আমাদের এই লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। এবং আপনারা অনেক উপকৃত হবেন। যদি আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে আর্টিকেলটি অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url