পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা

পালং শাকের ইংরেজি নাম হলো Spinach। আর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Spincia oleracea যা এমারান্হাসি পরিবারভুক্ত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করব পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা নিয়ে। কেননা আমাদের মধ্যে আমরা অনেকেই জানিনা পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা। 

তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা যে সকল টপিক নিয়ে আলোচনা করব সেগুলো হলোঃ পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা, পালং শাকের উপকারিতা, পালং শাকের অপকারিতা, পালং শাক খাওয়ার নিয়ম, পালং শাকে কি কি ভিটামিন থাকে, পালং শাকের জুসের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা, পালং শাকে কি এলার্জি আছে, পালং শাকের পুষ্টিগুণ ইত্যাদি।

পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা

পালং শাক একটি জনপ্রিয় সবজি। কম বেশি সবাই এই সবজি পছন্দ করে। পালং শাকে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় পুষ্টিবিদরা এটি বেশি করে খেতে বলে।  নৈত্য বাজারে গেলে চোখে পড়ে কত রকমের শাক সবজি এর মধ্যে অন্যতম হলো পালং শাক। শীতকালে পালং শাক বেশি পাওয়া যায়। পালং শাকে রয়েছে মিনারেল ভিটামিন,ফাইটো, নিউট্রিয়েন্টস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ। পালং শাককে এক ধরনের সুপার ফুড ও বলা হয়। আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। 

পেজ সূচিপত্র: পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা 

  • পালং শাকের উপকারিতা 
  • পালং শাকের অপকারিতা
  • পালং শাক খাওয়ার নিয়ম
  • পালং শাকে কি কি ভিটামিন থাকে 
  • পালং শাকের জুসের উপকারিতা
  • গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
  • পালং শাকে কি এলার্জি আছে
  • পালং শাকের পুষ্টিগুণ 
  • শেষ কথা: পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা

পালং শাকের উপকারিতা:

পালং শাকের উপকারিতা

পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা চোখের ভেতরে ও বাহিরের অংশে পুষ্টি যোগায়। এই পোস্টটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন পালং শাকের উপকারিতা এবং পালং শাক খেলে কত রোগব্যাধি থেকে সুস্থ থাকা যায়। আপনি যদি পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে না জানেন তাহলে আপনার পালং শাক খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তেমন বাড়বে না। তাহলে চলুন পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।

পালংশাক (Spinach) খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে। এগুলো হলো:

১. পালং শাক ভিটামিন এ, সি, কে এবং ফোলেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। 

২. পালং শাকে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস যেমন লুটেইন, ক্যারোটেনয়েডস ও জিয়াক্সানথিন আমাদের দেহকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

৩. পালং শাকে থাকা ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক।

৪. পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৫. পালং শাকে থাকা পটাসিয়াম ও নাইট্রেট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৬. পালং শাকে থাকা ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৭. পালং শাকে থাকা ভিটামিন এ এবং সি ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে, ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখে।

৮. কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবার থাকার কারণে পালংশাক ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

পালংশাক নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে এই সব উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং লাল শাকের পুষ্টিগুণ

পালং শাকের অপকারিতা: 

পালং শাকের অপকারিতা

উপরে আমরা পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এখন আমরা জানব পালং শাকের অপকারিতা নিয়ে। যদিও পালং শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর, তবুও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু অপকারিতা হতে পারে। সেগুলো হলো:

১. পালং শাকে উচ্চ মাত্রায় অক্সালেট থাকে, যা কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষত যারা কিডনি পাথরের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য।

২. পালং শাকে পিউরিন থাকে, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে এবং গাউট বা গাউটির ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।

৩. পালং শাকে থাকা অক্সালেট শরীরে আয়রনের শোষণ কমাতে পারে, যা আয়রন-স্বল্পতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে নিরামিষ ভোজীদের জন্য।

৪. পালং শাকে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন কে থাকার কারণে রক্ত পাতলা করার ওষুধের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

৫. কিছু মানুষের পালংশাকের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা ত্বকের প্রদাহ বা অন্যান্য অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

এই কারণগুলোর জন্য পালং শাক সুষম খাদ্য তালিকায় রাখার সময় পরিমিতি বজায় রাখা উচিত এবং বিশেষ কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পালং শাক খাওয়ার নিয়ম:

পালং শাক খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত জেনেছি, পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। এবার আমরা সবাই মিলে জানার চেষ্টা করব পালং শাক খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। কেননা পালং শাক খাওয়ার নিয়ম না জানলে এর সঠিক পুষ্টিগুণ আমরা পাবনা। তাই চলুন আর দেরী না করে পালং শাক খাওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

১. পালং শাক ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যাতে মাটি ও অন্যান্য মিশ্রণ দূর হয়।

২. পালং শাক সালাদের মধ্যে কাঁচা খাওয়া যায়, এতে শাকের পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন থাকে।

৩. পালং শাক হালকা সিদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। এতে কিছুটা পুষ্টি হারালেও, অক্সালেট কমে যায়, যা কিডনি পাথরের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৪. শাক ভাজি করে খাওয়া যায়, এর জন্য সামান্য তেল এবং পেঁয়াজ, রসুনের সাথে শাক ভাজি করলে মজাদার হয়।

৫. পালং শাক সূপ হিসেবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে, এতে শাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ একসাথে উপভোগ করা যায়।

৬. পালং শাক ফলের সাথে ব্লেন্ড করে স্মুদি হিসেবে খাওয়া যেতে পারে, এটি একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়।

৭. পালং শাক বিভিন্ন ধরনের কারির সাথে রান্না করে খাওয়া যায়, যেমন পালং পনির, পালং আলু ইত্যাদি।

# কিছু সতর্কতা:

- পালং শাক প্রতিদিন অতিরিক্ত না খেয়ে সুষম পরিমাণে খাওয়া উচিত।

- কিডনির সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে।

- পালং শাক খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

পালং শাক খাওয়ার এই নিয়মগুলো মেনে চললে পালং শাকের পুষ্টিগুণের সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

পালংশাকে কি কি ভিটামিন থাকে:

পালং শাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পালং শাকে প্রধানত যে ভিটামিনগুলো থাকে তা হলো:

১. ভিটামিন এ: দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

    - পরিমাণ: প্রায় ৯,৩৭৬ আইইউ (প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাক)।

২. ভিটামিন সি: ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে, ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

    - পরিমাণ: প্রায় ২৮.১ মিলিগ্রাম (প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাক)।

৩. ভিটামিন কে: রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

     - পরিমাণ: প্রায় ৪৮২.৯ মাইক্রোগ্রাম (প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাক)।

৪. ভিটামিন বি৯: ডিএনএ এবং নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ।

    - পরিমাণ: প্রায় ১৯৪ মাইক্রোগ্রাম (প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাক)।

৫. ভিটামিন ই: একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

     - পরিমাণ: প্রায় ২.০৩ মিলিগ্রাম (প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাক)।

৬. ভিটামিন বি৬: প্রোটিন এবং গ্লাইকোজেন বিপাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, ইমিউন এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতায় সাহায্য করে।

   - পরিমাণ: প্রায় ০.১৯৫ মিলিগ্রাম (প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাক)।

# অন্যান্য ভিটামিন

পালং শাকে কিছু পরিমাণে ভিটামিন বি১ ভিটামিন বি২ ভিটামিন বি৩ এবং ভিটামিন বি৫ থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক।

পালং শাকের এই ভিটামিনসমূহ দেহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণে সহায়ক, যা সাধারণ স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরো পড়ুনঃ ডাঁটা শাক খাওয়ার ১৫ উপকারিতা ও অপকারিতা

পালং শাকের জুসের উপকারিতা: 

পালং শাকের জুসের উপকারিতা

প্রিয় বন্ধুরা, এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে পালং শাকের জুসের উপকারিতা নিয়ে। পালং শাক শুধু রান্না করে নয়, জুস বানিয়েও খাওয়া যায়। আর পালং শাক জুস বানিয়ে খেলেও উপকারিতা পাওয়া যায়। চলুন দেখে নিই পালং শাকের জুসের উপকারিতা কি কি। পালং শাকের জুস বা রস পান করা স্বাস্থ্যগতভাবে অনেক উপকারিতা প্রদান করে। এখানে পালং শাকের জুসের কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

 ১.পালং শাকের জুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক।

 ২. পালং শাকের জুসে থাকা ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

 ৩. ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম পালং শাকের জুসে প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৪. ভিটামিন এ এবং লুটেইন পালং শাকের জুসে প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং চোখের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৫. পালং শাকের জুস লিভার পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং দেহ থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যা ডিটক্সিফিকেশনের জন্য উপকারী। 

 ৬.পালং শাকের জুসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

 ৭.পালং শাকের জুস ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকায় ওজন কমাতে সহায়ক। এটি শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট পুড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

 ৮. পালং শাকের জুসে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে, ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখে।

 ৯. পালং শাকের জুসে থাকা পটাসিয়াম এবং নাইট্রেট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

 ১০. পালং শাকের জুসে ফাইবার থাকে, যা পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

১১. পালং শাকের জুস শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

এই উপকারিতাগুলো পালং শাকের জুসকে একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে প্রমাণ করে।

গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা:

গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া অনেক উপকার বয়ে আনে। এটি মা ও অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পালং শাকের পুষ্টিগুণ গর্ভাবস্থায় বিভিন্নভাবে সহায়ক। এখানে কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

১. পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট (ভিটামিন বি৯) থাকে, যা ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধিতে এবং নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধে সাহায্য করে।

 ২. পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে আয়রনের প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যায়।

  ৩. পালং শাকে থাকা ক্যালসিয়াম মায়ের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভ্রূণের হাড়ের গঠনেও সাহায্য করে।

 ৪. ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ত্বক ও টিস্যু মেরামতেও সহায়ক।

  ৫. ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

 ৬. পালং শাকে থাকা ভিটামিন এ ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

 ৭. পালং শাকে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস যেমন লুটেইন ও জিয়াক্সানথিন মায়ের শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

 ৮. পালং শাকে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং গর্ভাবস্থায় সাধারণ সমস্যা হিসেবে পরিচিত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

 ৯. ম্যাগনেসিয়াম পেশী ও স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখে, যা গর্ভাবস্থায় পেশীর ক্র্যাম্প ও অবসন্নতা কমাতে সাহায্য করে।

 ১০. পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সহায়ক।

১১. পালং শাকে উচ্চমাত্রায় পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় পালং শাক নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা মায়ের এবং শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং যদি কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ আপেল খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং আপেল খাওয়ার সঠিক সময়

পালং শাকে কি এলার্জি আছে: 

আমরা সবাই পালং শাক খেয়ে থাকি, কিন্তু আমরা জানিনা পালং শাকে কি এলার্জি আছে? এখন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। যারা জানেন না তাদের জন্য ’পালং শাকে কি এলার্জি আছে’ এই টপিক নিয়ে কথা বলব। আপনি যদি জানেন ‘পালং শাকে কি এলার্জি আছে’ তাহলে আপনি পালং শাক খেয়ে সুস্থ থাকবেন।

পালংশাক সাধারণত নিরাপদ ও পুষ্টিকর হলেও কিছু মানুষের মধ্যে এর প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। পালংশাকের অ্যালার্জি খুবই বিরল, কিন্তু যারা অ্যালার্জিতে ভুগছেন তাদের জন্য তা গুরুতর হতে পারে। পালংশাকের অ্যালার্জি থেকে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

পালং শাকে কি এলার্জি আছে

এলার্জির লক্ষণসমূহ:

১. ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

২. শ্বাসকষ্ট, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা বা শ্বাসনালী ফুলে যাওয়া।

৩. গলা ফুলে যাওয়া বা গলায় খুসখুস অনুভূতি।

৪. মুখে বা ঠোঁটে ফোলা বা চুলকানি।

৫. পেট ব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া।

৬. গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া যা জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এটি হলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

এলার্জির কারণ:

- পালংশাকে থাকা প্রোটিন বা অন্যান্য উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা।

প্রতিকার:

- পালং শাক খাওয়ার পর যদি অ্যালার্জির কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

- পালং শাক এড়িয়ে চলা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ গ্রহণ করা।

যদি আপনি পালংশাক বা অন্যান্য খাদ্যের প্রতি অ্যালার্জি নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, তবে খাদ্য তালিকায় নতুন কিছু অন্তর্ভুক্ত করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সর্বোত্তম।

পালংশাকের পুষ্টিগুণ: 

পালং শাকের পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণের জন্য এর মধ্যে থাকা প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। নিচে ১০০ গ্রাম পালং শাক এর পুষ্টিমান দেওয়া হলো:

পালংশাকের পুষ্টিগুণ

পুষ্টি উপাদান প্রতি ১০০ গ্রাম

১. ক্যালরি : ২৩ ক্যালরি

২. প্রোটিন : ২.৯ গ্রাম

৩. কার্বোহাইড্রেট : ৩.৬ গ্রাম

৪. চিনি : ০.৪ গ্রাম

৫. ডায়েটারি ফাইবার : ২.২ গ্রাম

৬. ফ্যাট: ০.৪ গ্রাম

৭. স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.০১ গ্রাম

৮. মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.০১ গ্রাম

৯. পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.১৭ গ্রাম

১০. ভিটামিন এ : ৯৩৮০ আইইউ 

    ভিটামিন সি : ২৮.১ মিলিগ্রাম (প্রায় ৩৪% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

    ভিটামিন কে : ৪৮২.৯ মাইক্রোগ্রাম (প্রায় ৪০% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

    ফোলেট ভিটামিন বি৯ : ১৯৪ মাইক্রোগ্রাম (প্রায় ৪৯% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

    ভিটামিন ই : ২.০৩ মিলিগ্রাম (প্রায় ১০% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

     ভিটামিন বি৬ : ০.১৯৫ মিলিগ্রাম (প্রায় ১০% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

১১. মিনারেলস :

   ক্যালসিয়াম : ৯৯ মিলিগ্রাম (প্রায় ১০% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

   আয়রন : ২.৭ মিলিগ্রাম (প্রায় ১৫% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

   - **ম্যাগনেসিয়াম : ৭৯ মিলিগ্রাম (প্রায় ২০% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

   পটাসিয়াম: ৫৫৮ মিলিগ্রাম (প্রায় ১৬% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

   ম্যাঙ্গানিজ : ০.৮৯ মিলিগ্রাম (প্রায় ৪৫% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

   ফসফরাস : ৪৯ মিলিগ্রাম (প্রায় ৫% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

  জিঙ্ক : ০.৫৩ মিলিগ্রাম (প্রায় ৫% দৈনিক প্রয়োজনীয়তা)

উপকারিতা:

১. কম ক্যালরি : পালং শাকে ক্যালরি কম থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

২. প্রোটিন : উচ্চ প্রোটিন থাকার কারণে এটি পেশী গঠনে সাহায্য করে।

৩. ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।

৪. ভিটামিন সি : ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং ত্বককে সুস্থ রাখে।

৫. ভিটামিন কে : রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৬. ফোলেট: গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ডিএনএ তৈরি ও কোষ বিভাজনে সাহায্য করে।

৭. আয়রন: রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক, বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের জন্য।

৮. ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৯. ম্যাগনেসিয়াম: পেশী ও স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

১০. অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস: দেহকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

১১. ফাইবার: পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

এই পুষ্টি উপাদানগুলো পালং শাককে একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে, যা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত উপকারী।

শেষ কথা: পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা 

পালং শাক খুব‌ই উপকারী শাক, পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আজকের পোস্টের মাধ্যমে পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আজকের আর্টিকেল পড়ে আরো জানতে পেরেছেন, পালং শাক খাওয়ার নিয়ম, পালং শাকে কি এলার্জি আছে, পালং শাকের পুষ্টিগুণ, পালং শাকের কি কি ভিটামিন আছে, গর্ভাবস্থায় পালং শাক খেলে কি হয় ইত্যাদি। 

যেকোনো খাদ্য গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে খুব সহজে জানতে পেরেছেন। পোস্টটিতে কিছু না বুঝলে কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url