আনারস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং আনারস খাওয়ার নিয়ম

 আনারস আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে, তাছাড়া আনারস আমাদের শরীরে মাংসপেশীকে শক্ত রাখে। আনারসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে খাওয়া উচিত। আনারসে থাকা পুষ্টি আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে। আজকের পোস্টে আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আনারস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সহ আরো অনেক তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করব।

আনারস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং আনারস খাওয়ার নিয়ম

আনারসে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আনারসে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানিজ যা আমাদের শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই বিদ্যমান রয়েছে। আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানব ।

এছাড়াও জানবো আনারস খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থা আনারস খাওয়ার উপকারিতা ,আনারসের পুষ্টিগুণ, খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়, আনারস খেলে কি গ্যাস হয়, আনারস খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি। তাহলে চলুন আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।

পেজ সূচিপত্র: আনারস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং আনারস খাওয়ার নিয়ম

  • আনারস খাওয়ার উপকারিতা
  • আনারস খাওয়ার অপকারিতা
  • আনারসের পুষ্টিগুণ 
  • খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়  
  • গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয় 
  • আনারস খেলে কি গ্যাস হয় 
  • আনারস খাওয়ার নিয়ম
  • শেষ কথাঃ আনারস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং আনারস খাওয়ার নিয়ম

আনারস খাওয়ার উপকারিতা:

আনারস খাওয়ার উপকারিতা

এখন আমরা জানব আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আনারস মানব শরীরের জন্য খুবই জরুরী। যা কিনা স্বাস্থ্যকর ফল। এর রয়েছে ভিটামিন ক্যালসিয়াম ফসফরাস ও পটাশিয়াম ইত্যাদি। তাহলে চলুন আনারস খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি। 

আরো পড়ুনঃ ব্রণ দ্রুত অপসারণের দশ উপায়

১. আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। বদহজম জনিত যে কোন সমস্যা আনারস খাওয়ার মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া যায়।

২. নিয়মিত আনারস খাওয়ার মাধ্যমে দাঁতের জীবাণু সংক্রমণ কম হয়, দাঁত সুস্থ থাকে, দাঁতের মাড়ি ও ভালো রাখে।

৩. আনারসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এসব উপাদান আমাদের শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। তাই আনারস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের এসব উপাদানের অভাব পূরণ হয়। 

৪. আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। যা কিনা ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। এই রোগটি আমাদের চোখের রেটিনাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলে। প্রতি দিন আনারস খাওয়ার মাধ্যমে এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

৫. আনারসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৬. জ্বর হলে আনারস খাওয়া বেশ উপকারী। জন্ডিস ও জ্বর কমাতে আনারস বেশ ভালো কাজ করে।

৭. আনারস আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। হৃদপিন্ডে রক্ত পরিষ্কার রাখার কারণে বিভিন্ন রক্তনালীতে রক্তের জমাট বাঁধে না। এসব জমাট বাঁধতে না দেওয়ার জন্য আনারস খাওয়া জরুরী। 

৮. আনারসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও স্বল্প পরিমাণে ফ্যাট যা আমাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ফেলে, যাতে আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

 আনারস খাওয়ার অপকারিতা:

আনারস খাওয়ার অপকারিতা

এখন আমরা আনারস খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে কথা বলব। আনারস যেভাবে আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে তেমনি এর কিছু অপকারও রয়েছে। নিয়মের বাইরে কোন কিছু খেলে তার অপকারিতা ও ভুগতে হবে। তাই অপকারিতা জেনে আনারস খাওয়া উচিত। চলুন আনারস খাওয়ার অপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

১.গবেষণায় দেখা গিয়েছে গর্ভবতী মহিলাদের আনারস খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভপাতের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া একদম নিষেধ। গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। 

২.অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো, না হলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া  দেখা দিতে পারে।

৩.কাঁচা আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকা দরকার। কারণ অনেকে কাঁচা আনারসের জুস খায়। কাঁচা অবস্থায় এটি বিষাক্ত হয়ে থাকে। কাঁচা খাওয়ার ফলে বমির প্রবণতা দেখা দিতে পারে। 

৪.আনারস খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর থেকে অ্যালকোহলে পরিণত হয়। যার ফলে যাদের শরীরের বাতের ব্যথা হয় তা বেড়ে যেতে পারে। তাই যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তারা আনারস না খাওয়াই ভালো।

৫. কাঁচা আনারস খাওয়া ভালো নয়, এতে পেটের ব্যথার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। 

৬.ডায়াবেটিস রোগীদের আনারস খাওয়ার মাধ্যমে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। আনারসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা আনারস কম খাওয়া উচিত।

৭.অনেকের আনারসের এলার্জি থাকতে পারে ও বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আনারসের পুষ্টিগুণ:

আনারসের পুষ্টিগুণ

আনারস একটি টক জাতীয় ফল। আনারসের পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এর উপকারিতাও অনেক। তবে খালি পেটে আনারস খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে। আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে যারা আনারস খেতে চায় না তারাও খেতে চাইবে। আনারস আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী। আনারস যদিও আমাদের সকলের প্রিয় ফল না কিন্তু আনারসের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ থাকায় আনারস খাওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। তাই আনারসের উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ পড়ুন।

এখানে আমরা জানব আনারসের পুষ্টিগুণ বা উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে পাওয়া যায়: 

১. ৫০ কিলো ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে। 

২. ০.৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। 

৩. ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট থাকে।

৪. ০.৫  গ্রাম খনিজ পদার্থ 

৫. ১৩.১২ গ্রাম শর্করা 

৬. ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি১

৭. ০.০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২

৮. ৪৭.৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি 

৯. ১৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম 

১০. ০.০২ মিলিগ্রাম ফসফরাস 

১১. ১.৪ মিলিগ্রাম আঁশ 

১২. ১.২ মিলিগ্রাম লৌহ 

১৩. ১.৪ মিলিগ্রাম ডায়েটারি ফাইবার 

১৪. ০.৯  ম্যাঙ্গানিজ 

খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়: 

এখন আমরা জানব, খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়? খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত কিনা?

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে।

১. সকালে খালি পেটে এক গ্লাস আনারসের জুস শরীরের জন্য অনেক উপকারী 

২. যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা খালি পেটে আনারস খেলে গ্যাস্টিক আরো বেড়ে যেতে পারে।

৩. খালি পেটে আনারস খেলে লিভার ভালো থাকে। 

৪. যাদের পেটে সমস্যা নেই তাদের জন্য আনারস সকালে খালি পেটে খেলে উপকার অনেক। কিন্তু যাদের  পেটের  সমস্যা রয়েছে তাদের সকালে খালি পেটে খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো 

৫. আনারসের মধ্যে স্যালেসাইটিক এসিড রয়েছে। যা বেশি খাওয়ার মাধ্যমে জ্বর ও আসতে পারে। এ ধরনের সমস্যা থাকলে খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। 

৬. ডায়াবেটিস রোগীরা খালি পেটে আনারস বেশি খাবেন না, তা না হলে ক্ষতি হতে পারে। 

৭. আনারস শরীরকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়:

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়

এখন আমরা জানব, গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়? গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে কিনা?

আনারসের মধ্যে রয়েছে ব্রমিলিইন যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভপাতের জন্য দায়ি হতে পারে। আনারস খেতে পারবে তবে পরিমাণে একটু কম খাওয়া যাবে। কিন্তু আনারস থেকে একটু দূরে থাকাই ভালো। আনারসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম। 

এছাড়াও আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকার কারণে যেসকল গর্ভবতী মায়ের ওজন বেশি তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো। যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে থাকে তাহলেও খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে অপকারিতা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

আনারস খেলে কি গ্যাস হয়: 

আমরা এখন আলোচনা করব আনারস খেলে কি গ্যাস হয় এই বিষয় নিয়ে। যাদের আগে থেকেই গ্যাসের সমস্যা থাকে তারা আনারস খালি পেটে খাওয়া যাবেনা। কেননা এতে করে গ্যাস্ট্রিক আরো বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া ও বদহজম,ডায়রিয়া,আমাশয়, পাতলা পায়খানা ও হতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিক রয়েছে তারা খেয়াল রাখতে হবে, আনারসের সাদা অংশের দিকে। এর সাদা অংশ খেলে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে ও হজমের সমস্যা হতে পারে। 

তাই যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, তারা খালি পেটে আনারস না খেয়ে খাওয়ার এক ঘন্টা পরেও খেলে উপকার পাওয়া যাবে। তাই খালি পেটে না খেয়ে ভরা পেটে খেলে উপকার পাবে। 

আনারস খাওয়ার নিয়ম: 

সবশেষে আমরা আনারস খাওয়ার নিয়ম নিয়ে জানার চেষ্টা করব। আনারস আমাদের দেহের পুষ্টি যোগানের পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। ফল খাওয়া সব সময় শরীরের জন্য উপকারী। সকালে খালি পেটে আনারসের জুস খাওয়া ভালো। 

যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাহলে ব্যায়ামের আগেও পরে আনারস খাওয়া ভালো। আনারস বেশিরভাগ সকালে ও বিকেলে খেতে পারেন। ঘুমানোর আগেও খেতে পারেন। আনারস আমাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা দূর করে ফেলে। আপনি যদি আনারস না ধুয়ে খান তাহলে এলার্জি সমস্যা হতে পারে। 

শেষ কথা: আনারস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং আনারস খাওয়ার নিয়ম

আনারস আমাদের অনেক উপকার করে শরীরের জন্য। আনারস খাওয়ার উপকারিতার সাথে অপকারিতাও রয়েছে। অনেক মানুষ আনারস খেয়ে মৃত্যুর কারণে হয়েছে। তাই আমাদের আনারস খাওয়া নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। সব ফলের ভালো মন্দ দিক রয়েছে, প্রয়োজনের বেশি কোন ফল খাওয়া ঠিক না। 

এতক্ষণ এই পোষ্টের মাধ্যমে আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে খাওয়ার নিয়ম,আনারস খেলে কি গ্যাস হয়, গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়, আরো অনেক কিছু বিস্তারিত  আলোচনা করেছি। আশা করছি পোষ্টের মাধ্যমে খুব সহজে আনারস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url